(बंगला भाषा में क्या हनुमान आदि वानर बन्दर थे लेख का अनुवाद)
বাল্মীকি রামায়ন মধ্যে সর্বদা পুরষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্র জী মহারাজের পর পরম বলশালী বীর শিরোমণি হনুমান জীর নাম শরনে আসে। হনুমান জীর যখন আমরা চিত্র দেখি তো তার মধ্যে এক বানর/ বান্দরের চিত্র দেখতে পাই যার পেছনে লেজ রয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন উঠে যে, হনুমান জী কি বানর/বান্দর ছিলো? তার কি সত্যিই লেজ ছিলো?
এই প্রশ্নের উত্তর এইজন্য মহত্বপূর্ণ যে, অজ্ঞানী লোক বীর হনুমান জীর নাম নিয়ে পরিহাস করার অসফল প্রচেষ্টা করে।
আসুন এই প্রশ্নের উত্তর বাল্মীকি রামায়ন দ্বারাই প্রাপ্ত করি। সর্বপ্রথম "বানর" শব্দের উপর বিচার করি। সামান্য রূপে আমরা "বানর" শব্দ দ্বারা বান্দর আদি কোন পশু বুঝি। কিন্ত এই শব্দের বিশ্লেষন করা হয় তো " বানর" শব্দর অর্থ হয় বন মধ্যে উৎপন্ন হওয়া অন্ন গ্রহন কারী। যেমন পর্বত অর্থাৎ গিরিমধ্যে অবস্থান কারী এবং ওখানকার অন্ন গ্রহন কারী কে গিরিজন বলে। সেই প্রকার বন মধ্যে অবস্থান কারীকে বানর বলা হয়। সুগ্রীব, বালি আদির যে চিত্র আমরা দেখি তো সেখানে তাদের লেজ দেখা যায়। কিন্তু তাদের স্ত্রীদের কেন লেজ নেই? নর এবং পশুর এরূপ সম্পর্ক সংসারের কোন বর্গের মধ্যে কোথাও দেখা যায় না। এই জন্য ইহা স্পষ্ট যে, হনুমান আদির লেজ হওয়া কেবল চিত্রকারের কল্পনা মাত্র।
কিষ্কিন্ধা কান্ড (৩।২৮-৩২) মধ্যে শ্রীরামচন্দ্র জী প্রথম ঋচ্যমুক পর্বতে হনুমান জীর সাথে কথোপকথনের পশ্চাৎ লক্ষণ জী কে বললেন-
.
ন অন ঋগবেদ বিনীতস্য ন অ যজুর্বেদ- ধারিন।
ন অ সামবেদ বিদুষ শক্যম এবম বিভাষিতু মদম।।
( বাল্মীকি রামায়ন ৪।৩।২৮)
.
ঋগবেদ অধ্যয়নে অনভিজ্ঞ এবং যজুর্বেদে যার বোধ নেই তথা যার সামবেদ অধ্যয়ন নেই , সেই ব্যক্তি এইরূপ পরিস্কৃত বাক্য বলতে পারবে না। নিশ্চয় তাহার সম্পূর্ণ ব্যকরন অনেকবার অধ্যয়ন করা হয়েছে। কারন তার সাথে কথা বলার সময় সে কোন অশুদ্ধ শব্দের উচ্চারন করে নি। সংস্কার সম্পন্ন শাস্ত্রীয় পদ্ধতি দ্বারা উচ্চারন তাহার বাণী হৃদয়কে হর্ষিত করে দেয়।
.
সুন্দর কান্ড (৩০।১৮,২০) এ হনুমান জী অশোক বাটিকা মধ্যে সীতাকে নিজ পরিচয় দেবার প্রথমে চিন্তা করলেন যে- যদি দ্বিজাতি (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য) সমান পরিমার্জিত সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ করি তো সীতা আমাকে রাবন ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে যাবে। আমার এই বনবাসী রূপ দেখে তথা নগরী সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ করি তো আমাকে রাক্ষস ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে যাবে। আমাকে কামরূপী রাবন ভেবে ভয়াতুর বিশালাক্ষী সীতা কোলাহল আরম্ভ করে দেবে। এইজন্য আমাকে সামান্য নাগরিকের সমান পরিমার্জিত ভাষার প্রয়োগ করতে হবে।
.
এই প্রমাণ দ্বারা ইহা সিদ্ধ হয় যে, হনুমান জীর চার বেদ, ব্যকরন এবং সংস্কৃত সাহিত্যের অগাধ জ্ঞান ছিলো। হনুমান জী অতিরিক্ত অন্য বানর যেমন, বালির পূত্র অঙ্গদ রামায়ন মধ্যে সংসারের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষদের মধ্যে ছিলেন (কিষ্কিন্ধা কান্ড ৫৪।২)
হনুমান, বালি পূত্র অঙ্গদ অষ্টাঙ্গ বুদ্ধি সম্পন্ন, চার প্রকার বল দ্বারা যুক্ত এবং রাজনীতিতে চৌদ্দ গুন ছিলো।
★ বুদ্ধির অষ্ট অঙ্গ হচ্ছে- শোনার ইচ্ছা, শোনা, শুনে ধারন করা, ভাবনা করা, অর্থ করা, তাৎপর্য সঠিকভাবে বোঝা, বিজ্ঞান ও তত্বজ্ঞান।
★ চার প্রকার বল হচ্ছে- শাম, দাম, দন্ড,ভেদ
★ রাজনীতির চৌদ্দ গুন হচ্ছে- দেশ কালের জ্ঞান, দৃঢতা, কষ্টসহিষ্ণুতা, সর্ববিজ্ঞানতা, দক্ষতা, উৎসাহ, মন্ত্রগুপ্তি, একবাক্যতা, শুরতা,ভক্তিজ্ঞান, কৃতজ্ঞতা,শরনাগত,বৎসলত্যা, অধর্মের প্রতি ক্রোধ এবং গম্ভীরতা।
এই সব গুন যুক্ত কোন ব্যক্তি কি বান্দর আদি কোন পশু হতে পারে?
কিষ্কিন্ধা কান্ড (২৫।৩০) এ বালির অন্তিম সৎকারের সময় সুগ্রীব আজ্ঞা করে যে, আমার জেষ্ঠ ভ্রাতা আর্যের সৎকার রাজকীয় নিয়ম অনুসারে করা হবে।
আর্য নামে সম্বোধন কোন পশু কে করা হয়? না কি কোন শ্রেষ্ঠ গুন যুক্ত মানব কে?
.
এখন জটায়ু সমন্ধ্যে একটা প্রশ্ন আসে। তিনি কি কোন পক্ষী ? অরণ্য কান্ডে যখন রাবন সীতার অপহরন করে নিয়ে যায় তখন জটায়ুকে দেখে সীতা বললেন, হে আর্য জটায়ু! এই পাপী রাক্ষস রাবন আমাকে অপহরন করে নিয়ে যাচ্ছে।
(সন্দর্ভ অরণ্যকান্ড ৪৯।৩৮)
জটায়ো পশ্য মে সম আর্য হিরমাণম অনাথ বত।
অনেন রাক্ষসেদ্রেণ বরুণম পাপ কর্মনা।।
(অরণ্য কান্ড ৪৯।৩৮)
কথম তত চন্দ্র সংকাশম মুখম আসীত মনোকম।
সীতয়া কানি চ উক্তানি তস্মিন কালে দ্বিজাত্তম।।
( অরণ্যকান্ড ৬৮।৬)
এখানে জটাযু কে আর্য এবং দ্বিজ বলা হয়েছে। এই শব্দগুলো কখনো কোন পশু পাখিকে সম্বোধন করে বলা হয় না।
রাবন কে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে জটায়ু বলে-
"জটায়ু নাম নাম্না অহম গৃধ (অরণ্যঃ ৫০।৪)
অর্থাৎ আমি গৃধ কুটের রাজা
এখানে নিশ্চিত হয় যে, পশু পক্ষী কোন রাজ্যের রাজা হতে পারে না। এই সব প্রমান দ্বারা ইহা সিদ্ধ হয় যে, জটায়ু পক্ষী ছিলো না। বরং এক মানুষ ছিলো যে নিজ বৃদ্ধাবস্থা মধ্যে জঙ্গলে বাস করতো।
.
এরপর জাম্ববান সমন্ধ্যে প্রশ্নের অবতারনা হয়। তিনি কি কোন বনের পশু ছিলেন?
বিষয়টা রামায়ন থেকেই পরিষ্কার করা যাক-
যখন যুদ্ধ মধ্যে রাম লক্ষন মেঘনাদের ব্রহ্মাস্ত্র দ্বারা ঘায়েল হয়েছিলো তখন তারা এ সঙ্কট থেকে পরিত্রানের উপাই খুজে পাচ্ছিলো না। তখন বিভীষন এবং হনুমান জাম্ববানের কাছে যায়। জাম্ববান তখন হনুমান কে হিমালয় যেয়ে ঋষভ নামক পর্বত থেকে সন্জীবনী নামক ঔষধি আনতে বলে।
(যুদ্ধকান্ড ৭৪।৩১-৩৪)
এখানে জাম্বাবান কে অত্যন্ত বুদ্ধিমান বিজ্ঞরূপে দেখা যাচ্ছে। যে আপদ কালে সঠিক সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু আপদ কালে কোন পশুর কাছে সমাধান চাওয়া বা সে সমাধান দিতে পারবে এটা কখনো সম্ভব নয়। আর ভেষভ উদ্ভিদের জ্ঞান থাকা কোন পশুর পক্ষে সম্ভব নয়।
.
এখন একটি শঙ্কা আমাদের কাছে আসে যে, হনুমান কি উড়ে সমুদ্র পার হয়েছিলো?
কারন সবার মতামত এই যে, মানুষের সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রামায়ন মধ্যে কিষ্কিন্ধা কান্ডের অন্তে এই বিবরন স্পষ্ট রূপে দিয়েছে। সম্পাতির বর্ণনা শুনে অঙ্গদ আদি সব বীর সমুদ্রের তটে এসে সমুদ্রের তরঙ্গ দেখে ভয়ে ভীত হয়ে যায়। অঙ্গদ তখন সবাই কে সমুদ্র পার করার জন্য আহ্বান করলো। কিন্তু যুবরাজের এই আহ্বান শুনে সবাই তাদের অসমর্থতা জানায়। তখন অঙ্গদ বললো আমার এই সমুদ্র পার করবার শক্তি আছে। কিন্তু ফিরে আসার শক্তি নেই। তখন জাম্ববান বললো যে, আপনি আমাদের স্বামী। আপনাকে আমরা যেতে দেবো না। আমরা যদি কেউ যেতে না পারি তবে আমাদের মরাই ভালো। কারন বিনা কার্য সিদ্ধি ছাড়া আমরা সুগ্রিবের রাজ্যে কি করে যাবো? এরপর জাম্ববান বলে রাজন! আমি সেই বীরের প্রেরনা দিচ্ছি যে এই কার্য করতে সক্ষম। ইহার পশ্চাৎ হনুমানকে তার শক্তির স্মরণ করে প্রেরিত করা হয়েছিলো।
হনুমান জী বলে আমি এই সমুদ্র বাহুবল দ্বারা পার করবো।জঙ্ঘার বেগ সমুদ্রের জল আকাশে উঠার তূল্য হবে। আমি পার হবো বিনা বিশ্রাম ছাড়াই।
(কিষ্কিন্ধ্যা কান্ড ৬৭।২৬)
এরপর হনুমান সমুদ্র পারের জন্য এক পর্বতের শিখরে চড়লেন। অনেক বেগ সেই সময় প্রতীত হয়েছিলো যে, পর্বত কাপছিলো। হনুমান জীর সমুদ্র মধ্যে প্রবিষ্ট হওয়ার সময় ওইরূপ শব্দ হচ্ছিল যেন সেটা মেঘের গর্জন। আর হনুমান জী দেখতে দেখতে সমুদ্র পার হলেন।
হিন্দি ভাষাতে এক প্রসিদ্ধ কথা আছে, "হাওয়া সে বাত করনা" অর্থাৎ অতন্ত বেগের দ্বারা যে বলে বা গতি করে তাকে "হাওয়া সে বাত করনা" বলে। হনুমান জী এই বেগে সমুদ্র পার করেছিলো। যার উপমা হাওয়া সে বাত করনা পরিবর্তিত হয়ে "হাওয়া সে উড়না হয়ে গেছে। সত্য এই যে, ব্রহ্মচর্যের বল হাওয়ার সমান তেজ গতি দ্বারা কার্য করেছিলো।
অশোক বাটিকা মধ্যে হনুমান জী ধরা পড়ার পর যখন হনুমান জী কে রাবনের সম্মুখ আনা হয়। তখন তাকে উপহাস করার জন্য রাবনের সৈনিক তাকে জঙ্গলী জানোয়ার দেখানোর জন্য লেজ লাগিয়ে উপহাস করেছিলো। হনুমান জী এই উপহাসের সমুচিত প্রতিত্তোর দিয়েছিলো। সেই আগুন লাগানো লেজ দ্বারা পুরো লঙ্কাকে ভস্ম করে রাবন কে পাঠ শিখিয়েছিলো।
.
এই সব বর্ণনা দ্বারা ইহা সিদ্ধ হয় যে, হনুমান, সুগ্রীব,বালী, অঙ্গদ এরা কোন বন্য পশু ছিলো না। এরা সবাই বুদ্ধিমান মানুষ ছিলো।
ড. বিবেক অার্য
No comments:
Post a Comment